কুরবানি মানে টাকার গরম, অশ্লীল আনন্দ?


খুজিস্তা নূর ই নাহারীন মুন্নী:
কুরবানির আভিধানিক অর্থ আত্মত্যাগ। মূলত মানুষের মনের পাশবিকতাকে হত্যা করা। কদিন থেকে ফেসবুক খুললেই কেবল গরুর ছবি, সঙ্গে তাঁর মালিকের ছবি। কোথাও ছাগলের ছবি নেই। তার মানে দাঁড়ায় এবারের ঈদে কেউ ছাগল কুরবানি দেননি । নাকি অপেক্ষাকৃত কম দাম বলে লজ্জায় ফেসবুকে ছবি দিতে অস্বস্তি হয় ! কোন কোন পোস্টে আবার গরু সম্বন্ধে বিশদ বর্ণনা করা। কোথাকার গরু, কতো দাম, দৈর্ঘ্য প্রস্থ কতো ইত্যাদি ইত্যাদি। যা জীবনের শুরুতে পড়া গরু রচনাকে মনে করিয়ে দেয়। ফেসবুকের কুরবানির পোস্ট গুলো পড়তে পড়তে মনে হয় কোথায় আত্মত্যাগ ? এতো দেখি প্রতিযোগিতা, অর্থ-বিত্তের প্রদর্শনী। অর্থাৎ কার গরু কত বড়, কে কত বেশী টাকার গরু কুরবানি দিচ্ছে, কয়টা ?
আত্মত্যাগের সকল মহিমা চাপা পরে যায় অর্থের উত্তাপের কাছে। ঈদের এক মাস আগে থেকে পথে ঘাটে অফিসে নির্লজ্জ চাঁদাবাজির মহোৎসব । যে করেই হোক একটি দামী গরু কুরবানি দিয়ে ইজ্জত রক্ষা করতে হবে। অনেকে আবার ঘুষের টাকার বদলে কুরবানির গরু উপহার হিসেবে পাঠাচ্ছে। ঘুষের টাকায় কুরবানি আসলে কতখানি যৌক্তিক তা নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা নেই। কারণ ধর্মের দোহাই দিয়ে এ সব কিছুই এখন আমাদের দেশের সংস্কৃতির  অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। কেউ প্রশ্ন পর্যন্ত করে না, ” মানুষটা কত আয় করে, এত টাকা কি করে আসে”। মানুষের সাথে বেইমানী করছে, প্রতারণা করছে, অন্যের সম্পদ লুণ্ঠন করছে, হিংস্র পশুর মত খারাপ ব্যাবহার করছে যেন পাপ নেই তাতে, কিন্তু যে করেই হোক কুরবানি দিতেই হবে। অদ্ভুত মানসিকতা!
কুরবানির পরে হাসতে হাসতে কুরবানির ছবি পোস্ট। একটা কুরবানি কতোখানি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দোয়া পড়তে পড়তে করতে হয় সবার হয়ত তা জানা নেই। জানা থাকলে এমন নিষ্ঠুর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতে পারতেন না কিছুতেই। এই কষ্টটুকু মেনে নেওয়াই কুরবানি। অথচ ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখলে মনে হয় কষ্টের বদলে আনন্দ
হচ্ছে। কুরবানি করা পশু মুসলমানদের জন্য পবিত্রতম খাবার। এ খাবারে পা লাগানো কিংবা তাঁকে নিয়ে মজা করা কোন রকম ভদ্রতার মধ্যে পরে না।
আজ দেখলাম একটি কুরবানি করা গরুর রক্তে পা ডুবিয়ে তার উপর বসে কয়েকজন কিশোর-কিশোরীর ছবি। দোষ ওদের নয় ওরা বিভ্রান্তির মধ্যে বড় হচ্ছে, কুরবানির মাহত্ম সম্বন্ধে জানে না। আর জানে না বলেই পশুর জায়গায় মানুষ খুন করতেও দ্বিধা করে না কোন কোন ক্ষেত্রে । ভুল করে ওরা ধরে নেয় হাসি মুখে খুন করাটা বুঝি বা ইসলামেরই বিধান।
প্রশ্ন জাগে আমরা কি তবে আমাদের সন্তানদের লালন-পালন, দৃষ্টিভঙ্গি, সঠিক ধর্মীও মূল্যবোধ জাগাতে ব্যর্থ হচ্ছি ? তা না হলে দেশে এত কেন অস্থিরতা, অবিশ্বাস আর সংশয় ! নাকি প্রযুক্তির অপব্যবহার। যেই প্রযুক্তির কল্যাণে নিজেকে সুপরিচিত করে তোলার জন্য দিগবিদিগ ভুলে আমরা ক্রমাগত বর্তমানকে হারাচ্ছি। লেখক: সাবেক পরিচালক, ঢাকা ষ্টক এক্সচেঞ্জ। উপদেষ্টা, পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ।
কার্টেসি: https://goo.gl/qUDnDy

No comments:

Post a Comment

Pages